প্রতিদিনি এসব প্রতিষ্ঠানের শত শত কেজি চিকিৎসা বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ঠাকুরগাঁও শহরে বসবাসরত প্রায় দুই লাখ মানুষ।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল সীমানার মধ্যেই উন্মুক্ত স্থানে তাদের চিকিৎসা-বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। অবাধে সেখানে গরু, কুকুর বিচরণ করছে। কাক ঠোঁটে করে তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় উড়ে যাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও ডায়াবেটিক হাসপাতালের একটি ইনসেনারেশন কক্ষ রয়েছে। ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ রাজিউর রহমান জানান, তারা প্রতিদিনের বর্জ্য ইনসেনারেশন কক্ষে রাখেন। কয়েকদিন পর পর সেগুলো পোড়ানো হয়। যদিও তা প্রতিদিন পোড়ানোর নিয়ম রয়েছে।
সদর হাসপাতালের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি ক্লিনিক রয়েছে। এর একটি ‘প্রাইম হাসপাতাল’। এই হাসপাতালের ম্যানেজার ফারুক হোসেন ও মার্কেটিং সেক্রেটারি রেজাউল জানান, হাসপাতালের বর্জ্য সুইপার ভ্যানে করে নিয়ে যায়। কিন্তু সেগুলো তারা কোথায় ফেলে তা আমরা জানি না। আরও বেশ কয়েকটি ক্লিনিক ঘুরে অভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
মাম হাসপাতালের ম্যানেজার সফিউল আলম ভুট্টু ও হিসাবরক্ষক সুরুজ্জামান বলেন, সুইপার এখানকার বর্জ্য ভ্যানে করে নিয়ে যায়। কোথায় ফেলে তা আমরা জানি না।
আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল আজিজ চপল জানান, ‘হাসপাতালের ইনসেনারেশন কক্ষটি (বর্জ্য ধ্বংস করার কক্ষ) ৭-৮ বছর ধরে নষ্ট হয়ে আছে। বিষয়টি আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বহুবার জানিয়েছি। এটি মেরামত করতে মাত্র দুই থেকে তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন জবাব দেয় নি। তাই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বর্জ্য পোড়ানো হয়।
তবে হাসপাতালের ইনসেনারেশন কক্ষ পরিদর্শন করে দেখা যায়, কক্ষটির বেহাল দশা। এর সামনে হাসপাতালের বর্জ্যের ভাগাড়। বর্জ্যের উপর গবাদি পশু, কুকুর বিচরণ করছে। চারিদিকে বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আশে পাশে হাঁটা দায়। দুর্গন্ধে মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ।
সূত্র জানায়, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ভাড়া করা পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসব চিকিৎসা বর্জ্য নিয়ে পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনগুলোতেই ফেলে। সেখান থেকে কুকুর, কাক, গরু এবং টোকাইদের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। সুঁই, সিরিঞ্জ, প্লাস্টিক, তুলা, গজ, ব্যান্ডেজসহ নানাবিধ উপকরণের সাথে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব কারণে শহরবাসী রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
ঠাকুরগাঁও জেলার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে প্রতিদিন কী পরিমাণ চিকিৎসা বর্জ্য নির্গত হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কোনো কর্তৃপক্ষের কাছেই নেই। চিকিৎসা বর্জ্য আইন অমান্য করে দিনের পর দিন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কীভাবে মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে সবার মধ্যে।
অবিলম্বে জনস্বার্থে চিকিৎসা বর্জ্য পরিবেশসম্মতভাবে ইন্সিনেরেশনে পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা করাসহ ক্লিনিক্যাল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট তৈরি করার দাবি জানিয়েছে জেলার সচেতন মানুষ।